ভূমিকা
এই নীতিমালায় আল কুরআন ইনস্টিটিউটের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা কোর্স ও প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি লাভের উপায় সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালাটির লক্ষ্য – উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীকে ভালো ফলাফল ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যেনো কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চমানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা।
যোগ্যতার মানদণ্ডঃ
আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি লাভের মানদণ্ড নির্দিষ্ট কোর্স বা প্রোগ্রামের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে, যার বিবরণ বৃত্তির জন্য আবেদন গ্রহণের ঘোষণায় উল্লেখ থাকবে। তবে সাধারণ মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছেঃ
১। শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কারঃ একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের উপর ভিত্তি করে পবিত্র কুরআনের ইজাযা লাভের জন্য নির্ধারিত ফি মওকুফ করা হয়। এই সুবিধা লাভের জন্য আসেম আল কুফি –এর কিরাআতের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই তাজভিদের (তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক) পরীক্ষায় তার ব্যাচের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে হবে। যদি তাজভিদের (তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক) পরীক্ষায় ৯০% বা তার বেশি গড় নম্বর লাভ করে তাহলে সম্পূর্ণ ফি মওকুফ করা হবে। অন্যথায় ৫০% মওকুফ করা হবে।
আসেম আল কুফির কিরাআত ব্যতীত অন্যান্য কিরাআতের ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ মুতুন সমূহ ভালোভাবে মুখস্থ ও আত্মস্থ করা আবশ্যক। পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষায় ৮০% বা তার বেশি গড় নম্বর পেতে হবে।
২। আর্থিক প্রয়োজনঃ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ থাকা স্বাপেক্ষে ন্যূনতম ২৫% থেকে ৯০% পর্যন্ত ফি মওকুফ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ফি মওকুফের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই তার নিজের বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের আয়ের বিবরণী বা ট্যাক্স রিটার্নের মতো প্রাসঙ্গিক নথিপত্র প্রদান করে আর্থিক প্রয়োজনের বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।
৩। ভৌগলিক বিবেচনাঃ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ থাকা স্বাপেক্ষে কিছু শিক্ষাবৃত্তি বিশেষভাবে নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল বিশেষতঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তির নীতিমালা মৌলিকভাবে একাডেমিক সাফল্যের উপর নির্ভর করে। এই সুবিধা লাভের জন্য আবেদনকারীকে ধারাবাহিক ভালো ফলাফল করা এবং আল কুরআন ইন্সটিটিউট কর্তৃক নির্ধারিত গড় নম্বর ধরে রাখার পাশাপাশি শিক্ষাবৃত্তির ঘোষণায় উল্লেখিত অন্যান্য শর্ত পূরণ করা আবশ্যক।
আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তির ধরণঃ
১। সম্পূর্ণ বৃত্তিঃ যা কোর্স বা প্রোগ্রামের ১০০% ফি মওকুফ করবে।
২। আংশিক বৃত্তিঃ যা কোর্স বা প্রোগ্রামের ৫০% ফি মওকুফ করবে। অবশিষ্টাংশ শিক্ষার্থীকে পরিশোধ করতে হবে।
৩। আর্থিক সহায়তাঃ বিশেষ প্রয়োজনে শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, যা কোর্স ফি -এর ন্যূনতম ২৫% থেকে ৯০% পর্যন্ত মওকুফ করবে।
আবেদন প্রক্রিয়াঃ
১। আবেদনপত্রঃ আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তির জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীকে কোর্স বা প্রোগ্রামের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।
২। নথিপত্র প্রদানঃ আবেদনকারীকে তার নিজের বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের আয়ের বিবরণী বা ট্যাক্স রিটার্নের নথিপত্র এবং আর্থিক প্রয়োজনের বিষয়টি স্পষ্ট করতে প্রাসঙ্গিক কাগজ দাখিল করতে হবে।
৩। ব্যক্তিগত বিবৃতিঃ ইংরেজি, আরবি বা বাংলায় একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ জমা দিতে হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী কোর্সে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য, শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনের লক্ষ্য এবং কেনো তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করবেন।
৪। সময়সীমাঃ প্রতিটি কোর্স বা প্রোগ্রামের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে। বিলম্বিত আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
পর্যালোচনা ও বাছাই প্রক্রিয়াঃ
১। পর্যালোচনা ও বাছাই কমিটিঃ আমাদের বিশেষায়িত কমিটি আবেদনকারীর আর্থিক প্রয়োজন, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কোর্সের প্রতি তার দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে আবেদন সমূহ পর্যালোচনা করবে।
২। সিদ্ধান্ত অবহিতকরণঃ শিক্ষাবৃত্তির ঘোষণায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে ইমেইলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।
৩। সহায়তা প্রাপ্তির জন্য আবশ্যকীয়ঃ শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হতে পারে।
শর্তাবলি ও বাধ্যবাধকতাঃ
১। প্রতিটি ইজাযার জন্য খতম পূর্ণ করাঃ আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের প্রত্যেক ইজাযার সনদ লাভের জন্য পূর্ণ কুরআন খতম শুনানো আবশ্যক। এটি করতে ব্যর্থ হলে বৃত্তি বাতিল করা হতে পারে এবং ভবিষ্যতেও সে অনুপযুক্ত বিবেচিত হতে পারে।
২। ইজাযার জন্য ঘন্টার সময়সীমা নির্ধারণঃ প্রতিটি ইজাযার জন্য ৩০ – ৫০ ঘন্টার সময়সীমা নির্ধারিত থাকবে। শিক্ষার্থীকে এই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই তার খতম শেষ করতে হবে। অন্যথায় অতিরিক্ত ঘন্টা সমূহের ব্যয় শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে।
৩। অগ্রগতির প্রতিবেদনঃ আর্থিক সহায়তা ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে তার একাডেমিক অগ্রগতি ও ফলাফলের প্রতিবেদন বা আপডেট জমা দিতে হতে পারে।
নবায়ন ও ধারাবাহিকতাঃ
১। একাধিক স্তর বিশিষ্ট কোর্সঃ ইলমুল কিরাআত বা উচ্চতর ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি পুনঃনবায়ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সন্তোষজনক একাডেমিক সফলতা এবং আর্থিক প্রয়োজন অব্যাহত থাকা।
২। পুনঃআবেদনঃ যে সকল শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক অর্থ সহায়তা প্রয়োজন, তাদের প্রতিটি নতুন কোর্স বা প্রোগ্রামের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হতে পারে।
স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তাঃ
১। স্বচ্ছতাঃ আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য বাছাইয়ের মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে এবং সকল আবেদনকারীকে স্পষ্টভাবে জানানো হবে।
২। গোপনীয়তাঃ সকল আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক তথ্য এবং ব্যক্তিগত বিবৃতি সমূহ গোপন রাখা হবে এবং শুধুমাত্র বাছাই প্রক্রিয়ায় উপযুক্ততা নির্ধারণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
পলিসি আপডেট ও রিভিশনঃ
ধারাবাহিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এই আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তির নীতিমালায় বিভিন্ন পরিবর্তন হতে পারে। কোর্স অফারে ভিন্নতা, তহবিলে অর্থ বরাদ্দ থাকা অথবা এই সংক্রান্ত অন্য যেকোন পরিস্থিতির কারণে এই পরিবর্তন ঘটতে পারে। নীতিমালায় যেকোন পরিবর্তনের বিষয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া হবে।
জ্ঞাতব্য:
আন নুর ইন্সটিটিউট ফর আল আযহার এডুকেশন কোন সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রকার অর্থ গ্রহণ করেনা। দ্বীন শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তার অর্থ সাধারণ মুসলমানদের দান থেকে প্রদান করা হয়। এর একটি অংশ যাকাতের অর্থ থেকে বরাদ্দ হয়ে থাকে।